সুন্দরবনের মধুর বৈশিষ্ট্যঃ স্বাদ, গন্ধ, রং ও ঘনত্ব
আজকে আমি আলোচনা করবো সুন্দরবনের খাঁটি মধুর বৈশিষ্ট্য নিয়ে ইনশাআল্লাহ্। সুন্দরবনের মধু কি? কিভাবে তৈরি হয়? এর বৈশিষ্ট্য কি? খাঁটি-ভেজাল কিভাবে চেনবো? কোথায় পাওয়া যায়? ইত্যাদি বিষয়ে জানাবো ইনশাআল্লাহ্। যাতে করে আপনি মধু কেনার আগেই একটি ভালো ধারণা অর্জন করতে পারেন এনং ভেজাল থেকে দূরে থাকতে পারেন।
এই পোস্টটি আমি আমার মধু বিক্রি, সংগ্রহ ও গবেষণার দীর্ঘদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে লিখছি। তাই পোস্টটি হবে সম্পূর্ণ বাস্তবমুখী এবং সঠিক তথ্যে ভরপুর যা আপনাদের সুন্দরবনের খাঁটি মধু কেনার ক্ষেত্রে অনেক অনেক উপকার করবে ইনশাআল্লাহ। তবে আমার এই লিখা থেকে উপকার পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই বুঝে বুঝে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে হবে।
এই পোস্টটি আমি আমার মধু বিক্রি, সংগ্রহ ও গবেষণার দীর্ঘদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে লিখছি। তাই পোস্টটি হবে সম্পূর্ণ বাস্তবমুখী এবং সঠিক তথ্যে ভরপুর যা আপনাদের সুন্দরবনের খাঁটি মধু কেনার ক্ষেত্রে অনেক অনেক উপকার করবে ইনশাআল্লাহ। তবে আমার এই লিখা থেকে উপকার পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই বুঝে বুঝে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে হবে।
খুব কমন একটি প্রশ্নঃ বাজারে এতো ভেজাল মধু কেনো? কারণ, অনেকগুলো আছে, তার মধ্যে আমি মনে করি সবচেয়ে বড় একটি কারণ হলো- সাধারণ মধু ক্রেতাগণ মধুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছুই জানেন না। খাঁটি মধু কেমন হয় বা ভেজাল মধু কিরকম? এর কোনো তথ্যই কেউ সঠিক ভাবে জানেন না। আর এই জন্যই অন্ধ মধু ক্রেতাদের সামনে অসাধু ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছেন ভেজাল মধুর রমরমা বিজনেস।
খাঁটি মধু চিনতে হলে আপনার অবশ্যই মধুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ভালোমতো থাকতে হবে। যদি না থাকে তাহলে কিন্তু আপনি খাঁটি মধু চিনতে পারবেন না। আমাদের দেশে যত প্রকার মধু পাওয়া যায় তার মধ্যে সুন্দরবনের মধু সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় মধু। আজকে আমি (মধু আল-আমিন) এই সুন্দরবনের মধু নিয়ে কিছু জানা-অজানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ্। এই তথ্য গুলো আপনার জানা থাকলে, আপনি নিজেই সুন্দরবনের আসল নকল মধু অনেকটাই চিনতে পারবেন ইনশাআল্লাহ্। ফলে আপনি প্রতারকদের হাত থেকে রক্ষা পাবেন ইনশাআল্লাহ।
এই পোস্টটি পড়তে পারেনঃ কোন ফুলের মধু সবচেয়ে ভালো বা উপকারী?
সুন্দরবনের মধু কাকে বলে?
সুন্দরবনে মধু উৎপাদনের সময় সাধারণত মার্চ মাসর শেষের দিক থেকে জুন মাস পর্যন্ত। এই সময়ে সুন্দরবনে অনেক রকমের ফুল ফুটতে দেখা যায়। মৌমাছি তখন খুব ব্যস্ত থাকে মধু সংগ্রহের কাজে। প্রকৃতিতে তখন অনেক প্রকার ফুল থাকলেও মৌমাছি সব রকম ফুল থেকে বেশি পরিমাণে মধু পাইনা। ব্যাপক পরিমাণে মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে প্রধান চারটি ফুল ফুটতে দেখা যায়, আর তাহলোঃ খলিশা, গড়ান, কেওড়া ও বাইন। মৌমাছি এই সময়ে যে মধু সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করে, আমরা তাকেই সুন্দরবনের মধু বলে থাকি।
এছাড়াও সুন্দরবনে সারাবছরই কোনো না কোনো ফুল ফুটে থাকতে পারে এবং সারাবছরই কিছু কিছু মধু উৎপাদনও হতে পারে। কিন্তু এই সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে মধু উৎপাদন হয় না।
সুন্দরবনের মধুর বৈশিষ্ট্য
সুন্দরবনের মধুর বৈশিষ্ট্য বলতে আমি এখানে সুন্দরবনের মধুর স্বাদ, গন্ধ, রং ও ঘনত্ব (আরও কিছু) বুঝাচ্ছি।
এখানে আরেকটি ব্যাপারে জেনে রাখা ভালো যা অধিকাংশ মানুষই জানে না। আর তা হচ্ছে, সুন্দরবনের মধু প্রধানত চারটি ফুল থেকে সংগ্রহ করা হয় (যা একটু আগেই আলোচনা করেছি)। কিন্তু অনেকে মনে করেন সুন্দরবনের মধু হয়তো হাজারো রকমের ফুল থেকে মধু উৎপাদন হয় এবং সবসময়য় সারাবছর একই রকমের মধু উৎপাদন হয়। 'একই রকম' বলতে বুঝাতে চাচ্ছি যে মধুর স্বাদ, গন্ধ, রং ও ঘনত্ব সমসময় একরকম থাকবে, কোনো পরিবর্তন হবনা। কিন্তু এটা একটি ভুল ধারণা।
এখানে আরেকটি ব্যাপারে জেনে রাখা ভালো যা অধিকাংশ মানুষই জানে না। আর তা হচ্ছে, সুন্দরবনের মধু প্রধানত চারটি ফুল থেকে সংগ্রহ করা হয় (যা একটু আগেই আলোচনা করেছি)। কিন্তু অনেকে মনে করেন সুন্দরবনের মধু হয়তো হাজারো রকমের ফুল থেকে মধু উৎপাদন হয় এবং সবসময়য় সারাবছর একই রকমের মধু উৎপাদন হয়। 'একই রকম' বলতে বুঝাতে চাচ্ছি যে মধুর স্বাদ, গন্ধ, রং ও ঘনত্ব সমসময় একরকম থাকবে, কোনো পরিবর্তন হবনা। কিন্তু এটা একটি ভুল ধারণা।
আমি একটু আগেই উল্লেখ করেছি যে সুন্দরবন থেকে প্রধানত চারটি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ হয় ও মধু সংগ্রহ শুরু হয় মার্চ মাসর শেষের দিক থেকে জুন মাস পর্যন্ত। সুতরাং মধু সংগ্রহের প্রথম দিকে যেইরকম মধু পাওয়া যাবে, সংগ্রহের মাঝে বা শেষের দিকে ভিন্ন রকমের মধু পাওয়া যাবে। কারণ শুরুর দিকে যেই ফুল ছিল, সেই ফুল কিন্তু মাঝে বা শেষের দিকে থাকবেনা বা থাকলেই খুবই সামান্য থাকবে এবং অন্যান্য ফুলের উপস্থিতি দেখা যাবে। তাই সময়ের সাথে সাথে ফুলের পরিবর্তন হয় আর ফুলের পরিবর্তনের সাথে সাথে মধুর মধ্যেও সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়।
# সুন্দরবনের মধুর স্বাদ
সুন্দরবনের খাঁটি মধুর স্বাদঃ সুন্দরবনের খাঁটি মধু খুবই সুস্বাদু, হালকা টকটক মিষ্টি মধু। সাধারণত মধু চিনির থেকে ১ থেকে ১.৫ গুন বেশি মিষ্টি হতে পারে। তবে তুলনামূলক ভাবে সুন্দরবনের মধু অন্যান্য ফুলের মধুর তুলনায় কম মিষ্টি। যেমনঃ সরিষা ফুলের মধু বা লিচু ফুলের মধুর থেকে কম মিষ্টি।
সুন্দরবনের ভেজাল/কৃত্তিম মধুর স্বাদঃ সুন্দরবনের ভেজাল বা কৃত্তিম মধু খেতে একেবারেই ভালো লাগে না। হালকা টকটক লাগবে না। মনে হতে পারে চিনির সিরা খাচ্ছি। মুখের ভেতরে কস কস অনুভূতি লাগতে পারে। খুব ঝাঁঝালো হতে পারে বা মুখ গলা জলতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আসলে কোনো কিছুর স্বাদ সম্পূর্ণ বুঝতে হলে নিজে খেতে হবে। লিখে বা মুখে বলে সেটা পুরোপুরি বুঝানো সম্ভব নয়। তাই এখানে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য আপনি তখনি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন যখন আপনি নিজে সুন্দরবনের খাঁটি মধু এবং ভেজাল/কৃত্তিম মধু খাবনে।
# সুন্দরবনের মধুর গন্ধ
সুন্দরবনের খাঁটি মধুর গন্ধঃ আকর্ষণীয় সুঘ্রাণ যুক্ত এই সুন্দরবনের মধু। হালকা টকটক ঘ্রাণ।
সুন্দরবনের ভেজাল/কৃত্তিম মধুর গন্ধঃ ধুমাটে ধুমাটে গন্ধ লাগতে পারে। হালকা টকটক ঘ্রাণ পাওয়া যাবে না। কটু গন্ধ পাওয়া যেতে পারে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আসলে কোনো কিছুর গন্ধ সম্পূর্ণ বুঝতে হলে নিজে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। লিখে বা মুখে বলে সেটা পুরোপুরি বুঝানো সম্ভব নয়। তাই এখানে উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য আপনি তখনি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন যখন আপনি নিজে সুন্দরবনের খাঁটি মধু এবং ভেজাল/কৃত্তিম মধু পর্যবেক্ষণ করবেন।
# সুন্দরবনের মধুর রং
সুন্দরবনের খাঁটি মধু এবং ভেজাল/কৃত্তিম মধুর রং প্রায় একই রকম। খুব বেশি পার্থক্য দেখা যায় না। নিচে আমার নিজের সংগৃহীত সুন্দরবনের খাঁটি মধুর ছবি দেওয়া হলো।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই মধুটি প্রথম দিকের সংগ্রহ করা মধু। যখন সন্দরবনে বেশির ভাগ ফুল ছিলো খলিশা ফুল।
# সুন্দরবনের মধুর ঘনত্ব
সুন্দরবনের খাঁটি মধুর ঘনত্বঃ সুন্দরবনের খাঁটি মধু সবসময়ই পাতলা হবে। আমরা কখনই সুন্দবনে ঘন মধু পাইনি। নিচের ছবির দিকে লক্ষ করুন, মধু আঙ্গুলের সাথে যেভাবে লেগে আছে, তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, এই মধুটা খুবই ঘন মধু। কিন্তু সুন্দরবনের মধু বেশ পাতলা হয়। আঙ্গুলে এভাবে উঠালে পানির মতো গড়িয়ে পড়ে যাবে। এভাবে আঠালো ভাবে আসতে আসতে পড়বে না। দ্রুত গড়িয়ে পড়ে যাবে।
এবং সুন্দরবনের মধু খুব পাতলা হওয়ার ফলে মধুতে একটু ঝাকি লাগলেই কিছুক্ষণের মধ্যেই মধুতে প্রচুর সাদা ফেনা হয়। এবং বোতলের ভেতরে হাওয়া তৈরি হয়। তবে এই ফেনা বা হাওয়া সবসময় থাকবে না। ফেনা বা হাওয়া তৈরি হবে যখন মধু এক পাত্র থেকে আরেক পাত্রে ঢেলে রাখা হবে বা পাত্রে ঝাকি লাগলে। এবং এই ফেনা বা হাওয়া তৈরি হওয়ার পরে যদি পাত্র স্থির ভাবে এক জায়গায় রেখে দেওয়া হয় তাহলে আবার আসতে আসতে ফেনা চলে যাবে কিন্তু পাত্রের ভেতরে হাওয়া থাকবে। এই হাওয়া টাও চলে যাবে কয়েকবার পাত্রের মুখ খুলে দিলে।
এভাবে আসতে আসতে ফেনা বা হাওয়া চলে যাবে। যদি আবারও মধুর পাত্র পরিবর্তন হয় বা ঝাকি লাগে তাহলে আবারও ফেনা হবে এবং হাওয়া তৈরি হবে। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বাতাসে যখন আদ্রতার পরিমান বেশি থাকে তখন ফেনা এবং হাওয়া বেশি হবে। এবং আদ্রতার পরিমান কম থাকলে ফেনা এবং হাওয়া কম হবে।
সুন্দরবনের ভেজাল/কৃত্তিম মধুর ঘনত্বঃ সুন্দরবনের ভেজাল/কৃত্তিম মধুর বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই মধুটা একটু ঘন হবে বা খুব ঘন হবে। এবং ফেনা একেবারেই হবে না। যদিও হয় সেটা খুবই কম হবে।
# সুন্দরবনের মধু কি জমে যায়?
আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও অনেক পুরাতন সৎ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে শুনেছি যে সুন্দরবনের খাঁটি মধু জমে না। এমনকি সুন্দরবনের খাঁটি মধু ফ্রিজে রাখলেও জমতে দেখা যায় না।
উপসংহার:
আমি এখানে সুন্দরবনের খাঁটি মধু নিয়ে যত বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছি, সব বৈশিষ্ট্য গুলোই সুন্দরবনের 'র' মধু এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছি। 'র মধু' বলা হয়, যেই মধু প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদন হয় অর্থাৎ মৌমাছি ফুলের রস সংগ্রহ করে যে মধু বানাই এবং ওই মধু কোনপ্রকার প্রোসেসিং করা হয় না, আমরা তাকেই 'র মধু' বলে থাকি।
যাইহোক, আমি আমার সাধ্যমতো বোঝানর চেষ্টা করেছি তারপরেও ভুলত্রুটি থেকে যেতে পারে। তাই অভিজ্ঞদের চোখে যদি কোনো ভুল ধরা পড়ে অবশ্যই জানিয়ে দেবেন, ভুল সংসদন করে নেবো ইনশাআল্লাহ্।
খাঁটি মধু খুঁজছেন? মধু সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চান? আপনাদের সাথে আছি আমি মধু আল-আমিন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন